Tafsir-e-quran
সূরা বাকারা আয়াত (৯১-৯৫)
পর্ব -১৮
✍️ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
🌷সুরা আল বাকারা(আয়াত ৯১-৯৫)
৯১. আর যখন তাদের বলা হয়, তোমরা ঈমান আনো ওইসব কিতাবের ওপর যা আল্লাহ তাআলা নাযিল করেছেন, তখন বলে, আমরা ঈমান আনব আমাদের প্রতি অবতারিত কিতাবের ওপর, তদ্ব্যতীত আর সবগুলোকে তারা অস্বীকার করে,অথচ সেগুলোও সত্য, অধিকন্তু তাদের সঙ্গীয় কিতাবের সত্যতা ও প্রমাণকারী;আপনি বলুন, তবে কেন ইতঃপূর্বে যদি তোমরা মুমিন ছিলে?
৯২. আর মুসা আনলেন তোমাদের নিকট জ্বলন্ত প্রমাণসমূহ, তবুও তোমরা তাঁর পর বাছুরকে সাব্যস্ত করলে, আর তোমরা ছিলে অনাচারী।
৯৩. আর যখন তোমাদের ওয়াদা নিলাম এবং তুলে ধরলাম তোমাদের উপর তুর পর্বত; গ্রহণ করো যা কিছু আমি তোমাদেরকে দিতেছি সাহসের সাথে এবং শোনো, তারা বলল, শুনলাম; কিন্তু আমল করতে পারব না, আর মিশে গিয়েছিল, তাদের হৃদয়ের সেই বাছুর তাদের কুফরীর কারণে; আপনি বলুন, অত্যন্ত নিন্দনীয় যা কিছু আদেশ করতেছে তোমাদের ঈমান, যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাকো।
৯৪. আপনি বলে দিন, শুধুমাত্র তোমাদেরই জন্য নির্ধারিত হয়ে থাকে পরজগতের উপভোগ আল্লাহর নিকট অন্য কারো অংশগ্রহণ ব্যতীত, তবে তোমরা মৃত্যু কামনা করে দেখিয়ে দাও, আমরা সত্যবাদী হয়ে থাক।
৯৫. আর নিশ্চয়ই তারা কখনো তা কামনা করবে না তাদের স্বহস্তকৃত আমলসমূহের দরুণ, আর আল্লাহ তায়ালা সবিশেষ অবগত আছেন এই সমস্ত জালিম সম্বন্ধে।
🌎 আল্লাহ তায়ালা সত্য বলেছেন।
▪️ ------উপরিউক্ত আয়াতসমূহের ব্যাখ্যা------▪️
🌱৯৪ নং আয়াতের শানে নুযূল ---
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বর্ণনা করেন, ইহুদিরা যখন দাবি করতে থাকে যে, তারাই একমাত্র আল্লাহর প্রিয় পাত্র হিসেবে বেহেশত লাভের একক হকদার ও উত্তরাধিকারী। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন- আচ্ছা তোমরা যদি তোমাদের দাবি সম্পর্কে নিঃসন্দেহ এবং সত্যবাদী হও তবে আসো আমরা উভয়ে একত্রে আল্লাহর নিকট দোয়া করি -যেন আল্লাহ আমাদের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী তাদের ধ্বংস করে দেন ।কিন্তু তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই প্রস্তাবে সম্মত হয়নি কারণ তারা ভাল করে জানতো যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য, সত্যই আল্লাহর প্রেরিত।বস্তুত:তারা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উক্ত চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে দোয়ার জন্য জমায়েত হতো তবে আল্লাহ তাদের সকলকে ধ্বংস করে দিতেন এবং দুনিয়ার বুকে একজন ইহুদী ও বেঁচে থাকত না; এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা উক্ত আয়াতগুলো নাযিল করেন। অথবা বেহেশতে ইহুদীরা ভিন্ন অন্য কেউ যেতে পারবে না তাদের এ দাবি খন্ডনে অত্র আয়াত গুলো নাযিল হয়।
🌱৯৫ নং আয়াতের শানে নুযূল---
পূর্ববর্তী আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইহুদিদের লক্ষ্য করে বললেন যে, তোমাদের দাবিতে তোমরা যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো, তাহলে তোমরা আল্লাহর নিকট এভাবে প্রার্থনা করবে ,হে আল্লাহ! যার হাতে আমার প্রাণ, তুমি আমাদের মৃত্যু দান করো। তোমাদের থেকে কেউই এ প্রার্থনা করবে না; বরং একজন তাকে থুতু দেয় ফলে সেখানে সে মৃত্যুবরণ করে তারা এমনভাবে প্রার্থনা করতে অপছন্দ ও অস্বীকার করল। তখন এ পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়। [দুররুল মানছুর ৯৮/১]
▪️ মৃত্যু কামনার নির্দেশের কারণ:
ইহুদিরা দাবি করত যে, পরকালের সুখ ভোগে তাদেরও একচেটিয়া অধিকার রয়েছে। এরই সত্যতা প্রমাণের নিমিত্তে আল্লাহ তা'আলা তাদের মৃত্যু কামনা করতে বলেন। কেননা তাদের কৃত দাবি যদি পরকালের ব্যাপারে আন্তরিকই হয় তবে মৃত্যু কামনার ব্যাপারে তারা ইতস্তত করবে না। কারণ মৃত্যু ব্যতীত তাদের পরকালে প্রবেশের কোন পথ নেই। পরকালে গিয়ে আল্লাহর নৈকট্য বা মুক্তির আশায় ইহুদিদেরই সর্বাগ্রে মৃত্যু কামনা করা উচিত ছিল; কিন্তু তারা তা না করায় একথা প্রমাণিত হয় যে,তাদের দাবি আন্তরিক নয়।
▪️ মৃত্যু কামনা করার বিধান:
মৃত্যু কামনা করা শরীয়তে বৈধ নয়। হাদিস শরীফে মৃত্যু কামনা করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।আয়াতে মৃত্যু কামনার নির্দেশ পাওয়া যাচ্ছে। অতএব বলা হবে মূলত: এখানে মৃত্যু কামনার নির্দেশ নয়; বরং এখানে দলিল পেশ করাই উদ্দেশ্য এবং তারা যে তাদের দাবিতে মিথ্যাবাদী একথা প্রমাণই উদ্দেশ্য।যে সকল হাদিসে মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে সেস্থলে কোন বিপদ অবতীর্ণ হওয়ার কারণে মৃত্যু কামনা নিষিদ্ধ হওয়াই বুঝায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ...