Tafsir-e-quran
সূরা আল বাকারা
![]() |
Surah Baqara(ayat70-75) |
👉পর্ব-১৪
✍️ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
🌷সুরা আল বাকারা (আয়াত ৭১-৭৫)
৭১. তারা বলল, এবার সঠিক তথ্য এনেছ। অতঃপর তারা সেটা জবাই করল, অথচ জবাই করবে বলে মনে হচ্ছিল না।
৭২. যখন তোমরা একজনকে হত্যা করে করে সে সম্পর্কে একে অপরকে অভিযুক্ত করেছিলে। যা তোমরা গোপন করছিলে, তা প্রকাশ করে দেওয়া ছিল আল্লাহর ওভিপ্রায়।
৭৩. অতঃপর আমি বললাম, গরুর একটি খন্ড দ্বারা মৃতকে আঘাত করো। এভাবে আল্লাহ মৃতকে জীবিত করেন এবং তোমাদেরকে তাঁর নির্দেশ সমূহ প্রদর্শন করেন-যাতে তোমরা চিন্তা কর।
৭৪. অতঃপর এ ঘটনার পরে তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেছে। তা পাথরের মতো অথবা তদপেক্ষা ও কঠিন। পাথরের মধ্যে এমন ও আছে, যা থেকে ঝরণা প্রবাহিত হয়, এমনও আছে, যা বিদীর্ণ হয়, অতঃপর তা থেকে পানি নির্গত হয় এবং এমনও আছে, যা আল্লাহর ভয়ে খসে পড়তে থাকে। আল্লাহ তোমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বে-খবর নন।
৭৫. হে মুসলমানগণ, তোমরা কি আশা কর যে, তারা তোমাদের কথায় ঈমান আনবে? তাদের মধ্যে একদল ছিল, যারা আল্লাহর বাণী শ্রাবণ করত; অতঃপর বুঝে- শুনে টা পরিবর্তন করে দিত এবং তারা তা অবগত ছিল।
🌍 আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন।
--------উপরোক্ত আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা--------
পাথরের শ্রেণীবিন্যাস ও ক্রিয়া:
আয়াতে পাথরের তিনটি প্রিয়া বর্ণিত হয়েছে।
১. পাথর থেকে পানি বেশি প্রসরণ
২. কমপানি নিঃসরণ। এ দুটি প্রভাব সবারই জানা।
৩. আল্লাহ তাআলার ভয়ের নিচে গড়িয়ে পড়া। এ তৃতীয় ক্রিয়াটি কারও কারও অজানা থাকতে পারে। কারণ পাথরের কোনরূপ জ্ঞান ও অনুভূতি নেই। কিন্তু জানা উচিত যে, ভয় করার জন্য জ্ঞানের প্রয়োজন নেই। জন্তু-জানোয়ারের জ্ঞান নেই। কিন্তু আমরা তাদের মধ্যে ভয়-ভীতি প্রত্যক্ষ করি। তবে চেতনার প্রয়োজন অবশ্যই আছে। জড় পদার্থের মধ্যে এতোটুকু চেতনা ও নেই বলে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না। কারণ চেতনাও প্রাণের ওপর নির্ভরশীল। খুব সম্ভব জড় পদার্থের মধ্যে এমন সুক্ষ্ম প্রাণ আছে, যা আমরা অনুভব করতে পারি না। উদাহরণতঃ বহুৎ পন্ডিত মস্তিষ্কের চেতনা শক্তি অনুভব করতে পারেন না। তারা একমাত্র যুক্তির ভিত্তিতে এর প্রবক্তা। সুতরাং ধারণাপ্রসূত প্রমাণাদির চেয়ে কুরআনের আয়াতের যৌক্তিকতা কোন অংশেই কম নয়।
এছাড়া আমরা এরূপ দাবিও করি না যে, পাথর সবসময় ভয়ের দরুনই নিচে গড়িয়ে পড়ে। কারণ আল্লাহ তাআলা কতক পাথর বলেছেন। সুতরাং নিচে গড়িয়ে পড়ার জন্য আরো বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তন্মধ্যে একটি হলো আল্লাহ তাআলার ভয়।
ইহুদিদের অন্তর পাথরের চেয়েও বেশি কঠিন:
এখানে তিন রকমের পাথরের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও সাবলীল ভঙ্গিতে এদের শ্রেণীবিন্যাস ও উদ্দেশ্য ব্যক্ত করা হয়েছে। কতক পাথরের প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা এত প্রবল যে তা থেকে নদী-নালা প্রবাহিত হয়ে যায় এবং এর দ্বারা সৃষ্ট জীবের উপকার সাধিত হয়। কিন্তু ইহুদিদের অন্তর এমন নয় যে, সৃষ্টি জীবের দুঃখ-দুর্দশায় অশ্রুসজল হবে। কত পাথরের মধ্যে প্রভাবান্বিত হওয়ার ক্ষমতা কম। ফলে সেগুলো দাড়া উপকার ও কম হয়। এ ধরনের পাথর প্রথম ধরনের পাথর এর তুলনায় কম নরম হয়। কিন্তু ইহুদিদের অন্তরে এ দ্বিতীয় ধরনের পাথর অপেক্ষাও বেশি শক্ত। কতক পাথরের মধ্যে উপরিউক্ত রূপ প্রভাব না থাকলেও এতোটুকু প্রভাব অবশ্যই আছে যে খোদার ভয়ে নিচে গড়িয়ে পড়ে। এ পাথর উপরিউক্ত দুই প্রকার পাথরের তুলনায় অধিক দুর্বল কিন্তু ইহুদিদের অন্তর এ দুর্বলতম প্রভাব থেকে মুক্ত।
৭৫.আয়াতের ব্যাখ্যা..
এখানে 'আল্লাহর বাণী' অর্থাৎ তাওরাত। 'শ্রবণ করা' অর্থ পয়গম্বরদের মাধ্যমে শ্রবণ করা। 'পরিবর্তন করা' অর্থাৎ কোন কোন বাক্য অথবা ব্যাখ্যা অথবা উভয়টিকে বিকৃত করে ফেলা।
অথবা, "আল্লাহর বাণী"অর্থাৎ ওই বাণী, যা মূসা আলাইহিস সাল্লাম এর সত্যায়নের উদ্দেশ্যে তার সাথে গমনকারী ৭০ জন ইহুদী তূর পর্বতে শুনেছিল। 'শ্রবণ' অর্থ মাধ্যম বিহীনভাবে সরাসরি শ্রবণ। 'পরিবর্তন' অর্থ স্বগোত্রের কাছে প্রসঙ্গক্রমে এরূপ বর্ণনা করা যে, আল্লাহ তা'আলা উপসংহারে বলে দিয়েছেনঃ তোমরা যেসব নির্দেশ পালন করতে না পারো তা মাফ।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর আমলের যে সব ইহুদি ছিল তাদের তারা উল্লেখিত কোন কুকর্ম সংঘটিত হয়নি সত্য, কিন্তু পূর্ববর্তীদের এসব দুষ্ককর্মকে তারা অপছন্দ ও ঘৃণা করত না। এ কারণে তারাও কার্যতঃপূর্ববর্তীদেরই মত।
চলবে....
জুলাই ০৭, ২০২৩
Tags :
সূরা বাকারা
Subscribe by Email
Follow Updates Articles from This Blog via Email
No Comments