👉 পর্ব-৪
✍ সূরা আল বাকারা (আয়াত 21 থেকে 25)
🍁পরম করুনাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
২১. হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তার এবাদত করো, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারবে।
২২. যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য ভূমিকে বিছানা এবং আকাশকে ছাদ স্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন,আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসেবে। অতএব, আল্লাহর সাথে তোমরা অন্য কাকেও সমকক্ষ করো না। বস্তুত: এসব তোমরা জানো।
২৩. এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকে ও সঙ্গে নাও-এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো।
২৪. আর যদি তা না পারো-অবশ্য তা তোমরা কখনও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।
২৫. আর হে নবী,( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ সমূহ করেছে, আপনি তাদেরকে এমন বেহেশতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান থাকবে। যখনই তারা খাবার হিসেবে কোন ফল প্রাপ্ত হবে, তখনই তারা বলবে, এত অবিকল সে ফলই যা আমরা ইতিপূর্বে লাভ করেছিলাম। বস্তুত: তাদেরকে একই প্রকৃতির ফল প্রদান করা হয়। এবং সেখানে তাদের জন্য শুদ্ধাচারিনী রমনীকুল থাকবে। আর সেখানে তারা অনন্তকাল অবস্থান করবে।
🌎 আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন।
👉উল্লেখিত আয়াতের ব্যাখ্যা
🍁 কোরআন একটি গতিশীল ও কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী মুযেজা:
অন্যান্য সমস্ত নবী ও রাসূলগণের মুযেজা সমূহ তাদের জীবন পর্যন্তই মুযেজা ছিল। কিন্তু কোরআনের মুযেজা হুজুর সাঃ এর তিরোধানের পর ও পূর্বের মতোই মুযেজা সুলভ বৈশিষ্ট্য সহই বিদ্যমান রয়েছে।আজ পর্যন্ত একজন সাধারন মুসলমান ও দুনিয়ার যেকোন জ্ঞানী-গুণী কে চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারে যে, কোরআন এর সমতুল্য কোন আয়াত ইতিপূর্বেও কেউ তৈরি করতে পারেনি, এখনো কেউ পারবেনা, আর যদি সাহস থাকে তবে তৈরি করে দেখাও।
সুতরাং কোরআনের রচনাশৈলী, যার নমুনা আর কোন কালে কোন জাতি পেশ করতে পারেনি, সেটাও একটি গতিশীল দীর্ঘস্থায়ী মুযেজা। হুজুরের যুগে যেমন এর নজির পেশ করা যায়নি, অনুরূপভাবে আজও তা কেউ পেশ করতে পারেনি, ভবিষ্যতেও সম্ভব হবে না।
কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে যে কোরআনের সংরক্ষণের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ গ্রহণ করেছেন।কেয়ামত পর্যন্ত এর মধ্যে বিন্দু-বিসর্গও পরিমাণ পরিবর্তন পরিবর্তন না হয় তা সংরক্ষিত থাকবে। আল্লাহ তাআলা এ ওয়াদা এভাবে পূরণ করেছেন যে, প্রত্যেক যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষ ছিলেন এবং রয়েছেন, যারা কোরান কেমন ভাবে স্বীয় স্মৃতিপটে ধারণ করেছেন যে,এর প্রতিটি যের যবর তথা স্বর চিহ্ন পর্যন্ত অবিকৃত রয়েছে। নাযিলের সময় থেকে চৌদ্দ শতাধিক বছর অতিবাহিত হয়েছে। এ দীর্ঘ সময়ের মধ্যেই কিতাবে কোন পরিবর্তন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। প্রতিযোগী স্ত্রী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে কোরআনের হাফেজ ছিলেন ও রয়েছেন। বড় বড় আলেম যদি একটি জের জবর বেশ কম করেন তবে ছোট বাচ্চারা তার ভুল ধরে ফেলে।পৃথিবীর কোন ধর্মীয় কিতাবের এমন সংরক্ষণ ব্যবস্থা সে ধর্মের লোকেরা এক-দশমাংশ পেশ করতে পারবে না।আর কোরআনের মত নির্ভুল দৃষ্টান্ত বা নজির স্থাপন করা তো অন্য কোন গ্রন্থ সম্পর্কে কল্পনাও করা যায় না।অনেক ধর্মীয় গ্রন্থ সম্বন্ধে এটাই স্থির করা মুশকিল যে এ কিতাব কোন ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল এবং তাতে কয়টি অধ্যায় ছিল। খোদানাখাস্তা সমগ্র বিশ্বের কোরআন ও যদি কোন কারণে ধ্বংস হয়ে যায়, তবু এই গ্রন্থ পূর্বের ন্যায় সংরক্ষিত থাকবে।কয়েকজন হাফেজ একত্রে বসে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তা লিখে দিতে পারবেন। এ অদ্ভুত সংরক্ষণ ও আল-কোরআনের ঐ বিশেষত্ব এবং এ যে আল্লাহর কালাম তার অন্যতম উজ্জ্বল প্রমাণ। যেভাবে আল্লাহর সত্তা সর্বযুগে বিদ্যমান থাকবে, তাতে কোন সৃষ্টির হস্তক্ষেপের কোন ক্ষমতা নেই, অনুরূপভাবে তার কালাম সকল সৃষ্টির রদবদলের ঊর্ধ্বে এবং সর্বযুগে বিদ্যমান থাকবে।কোরআনের এই ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যতা বিগত চৌদ্দশত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত বিদ্যমান থাকে।এ প্রকাশ্য মুযেজার পর কোরআন আল্লাহর কালাম হওয়াতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয় থাকতে পারে না।
🍁 25 নং আয়াতের ব্যাখ্যা-
জান্নাতবাসীদেরকে একই আকৃতিবিশিষ্ট বিভিন্ন ফলসমূহ পরিবেশনের উদ্দেশ্য হবে পরিতৃপ্ত ও আনন্দ সংস্কার।কোন কোন ভাষ্যকারের মতে ফলসমূহ পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ার অর্থ বেহেস্তে ফলাদি আকৃতিগত ভাবে ইহজগতে প্রাপ্ত ফলের অনুরূপই হবে ।সেগুলো যখন জান্নাত বাসী দের মাঝে পরিবেশন করা হবে তখন তারা বলে উঠবে অনুরূপ ফল তো আমরা দুনিয়াতেও পেতাম। কিন্তু স্বাদ ও গন্ধ হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ।দুনিয়ার ফলে সঙ্গে তার কোন তুলনাই চলবে না ,শুধু নামের মিল থাকবে।
জান্নাতে পূত পবিত্র অপরিচ্ছন্ন স্ত্রী লাভের অর্থ,তারা হবে পার্থিব যাবতীয় বাহ্যিক ও গঠনগত ত্রুটি বিচ্যুতি ও চরিত্রগত কলুষতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এবং প্রসাব পায়খানা, প্রসবোত্তর স্রাব প্রভৃতি যাবতীয় ঘৃণ্য বিষয়ের ঊর্ধ্বে।অনুরূপভাবে নীতিভ্রষ্টতা,চরিত্রহীনতা ,অবাধ্যতা প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ ত্রুটিও কদর্যতার লেশমাত্র তাদের মধ্যে পাওয়া যাবে না।
পরিশেষে বলা হয়েছে যে,জান্নাতের সুখ স্বাচ্ছন্দ ও ভোগ বিলাসের উপকরণসমূহ কে যেন দুনিয়ার পতনশীল অপমান উপকরণ সমূহের ন্যায় মনে না করা হয় যাতে যে কোন মুহূর্তে বিলুপ্তি ও ধ্বংসপ্রাপ্ত আশঙ্কা থাকে।বরং জান্নাতবাসি গণ অনন্তকাল সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের এই অফুরন্ত উপকরণসমূহ ভোগ করত বিমল আনন্দ ফুর্তি ও চরম তৃপ্তি লাভ করতে থাকবেন।
👉আলোচ্য আয়াতে মুমিনদের জান্নাতের সুসংবাদ লাভের জন্য ঈমানের সাথে সাথে সৎকাজের শর্ত আরোপ করা হয়েছে। তাই সৎকর্মহীন ঈমান মানুষকে এ সুসংবাদের অধিকারী করতে পারে না। যদি ও কেবলমাত্র ঈমানই স্থায়ী দোযখবাস হতে অব্যাহতি প্রদান করতে পারে।সুতরাং মুমিন যত পাপীই হোক না কেন এক না এক কালে দোযখ থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে ।কিন্তু সৎকাজ ভিন্ন কেউ দোযখের শাস্তি থেকে সম্পূর্ণ অব্যাহতি লাভের অধিকারী হতে পারবে না।
👉চলবে
Subscribe by Email
Follow Updates Articles from This Blog via Email
No Comments