Tafsir-e-Quran সূরা আল বাকারা (আয়াত-৬১-৬৫) অর্থ ও তাফসীর - Tafsir e quran-তাফসীরে কোরআন

Tafsir e quran-তাফসীরে কোরআন

আসুন কোরআনের বাংলা অর্থ পড়ি ও জানি
thumbnail

সূরা আল বাকারা (আয়াত-৬১-৬৫) অর্থ ও তাফসীর

surah baqara bangla /ayat-61-65)


 👉 পর্ব -১২

✍️পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

🌷

সূরা আল বাকারা (আয়াত-৬১-৬৫) অর্থ ও তাফসীর


৬১. আর যখন তোমরা বললে ,হে মূসা!আমরা একই রকমের খাদ্যের উপর কখনো থাকব না আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট প্রার্থনা করুন, যেন পয়দা করেন আমাদের জন্য এমন খাদ্য যা জমিনে উৎপন্ন হয়- শাক, কাঁকুড়,গম, মসুর এবং পেঁয়াজ, তিনি বললেন ,তোমরা কি নিতে চাও নিকৃষ্ট বস্তুসমূহ কে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহের বদলে? অবতরণ কর কোন শহরে, অবশ্য পাবে তোমরা তোমাদের প্রার্থীত দ্রব্যগুলো, আর স্থায়ী হলো তাদের ওপর লাঞ্ছনা ও অধঃপতন , আর তারা আল্লাহর গজবের যোগ্য হয়ে পড়ল; তা এজন্য যে, তারা অমান্য করে যাচ্ছিল আল্লাহর হুকুম সমূহ এবং হত্যা করেছিল নবীগনকে অন্যায়ভাবে; আর তা এ কারণে যে ,তারা অবাধ্য হয়েছিল এবং বারংবার সীমা লঙ্গন করেছিলো।


৬২. সুনিশ্চিত যে, মুসলমান, ইহুদি, নাসারা এবং সাবেয়ীন সম্প্রদায় যারা বিশ্বাস রাখে আল্লাহর এবং কেয়ামতের প্রতি আর নেক কাজ করে, তাদের জন্য পুরস্কার ও রয়েছে তাদের প্রভুর নিকট, তাদের কোন প্রকার ভয় ও নেই, তারা শোকান্বিত ও হবে না।


৬৩. আর যখন আমি তোমাদের অঙ্গীকার নিলাম এবং তুর পাহাড় কে উঠিয়ে ধরলাম তোমাদের উপর ( এবং বলেছিলাম) গ্রহণ করো যে কিতাবটি আমি তোমাদেরকে দান করেছি, দৃঢ় ভাবে এবং স্মরণ রাখ যে, সমস্ত হুকুম তাতে রয়েছে, আশা করা যায় যে, তোমরা মুত্তাকী হতে পারবে।


৬৪. অতঃপর তোমরা ফিরে গেলে সেই অঙ্গীকারের পরেও, তখন যদি তোমাদের উপর আল্লাহর দয়া ও তার রহমত না হতো, তবে অবশ্যই তোমরা বিনাশপ্রাপ্ত হতে।


৬৫. আর তোমরা অবগতই আছ ঐ সমস্ত লোকের অবস্থা যারা তোমাদের মধ্যে হতে শনিবার সম্বন্ধীয় আদেশ অমান্য করেছিল, সুতরাং আমি তাদেরকে বলে দিলাম, তোমরা হয়ে যাও লাঞ্চিত বানর।


🌍 আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন।


----------উপরিউক্ত আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা-----------


৬১.

আয়াতের ব্যাখ্যা, 


এখানেও বনি ইসরাইলের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে, যা তীহ প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল। মহান রাব্বুল আলামিনের অনুগ্রহ স্বরূপ বনি ইসরাইলের প্রতি প্রেরিত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাদ্য 'মান্না ও সালওয়া"ভক্ষণ করতে করতে ইহুদিরা যখন সুস্থ ও সবল হয়ে উঠল, তখন তারা নিজেদের প্রকৃতিগত অবাধ্যতা অবলম্বন করে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম কে বলল, একই প্রকার খাদ্যে আমাদের তৃপ্তি হচ্ছে না। অতএব, আপনি আপনার প্রতিপালকের নিকট বলুন, তিনি যেন আমাদের জন্য মিশর বাসীদের খাদ্যের ন্যায় নানা প্রকার খাদ্য উৎপাদন করেন। উত্তরে হযরত মূসা আলাইহিস সালাম বলেন, উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্যের পরিবর্তে নিকৃষ্ট দ্রব্য সমূহ যদি তোমাদের লোভনীয় হয়, তবে কোন শহরে চলে যাও। সেখানে তোমাদের পার্থিব দ্রব্যসমূহ পাবে। অনন্তর ইহুদীরা সেখানে গিয়ে অবাধ্যতা ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ায় তাদের উপর আল্লাহ তাআলার শাস্তি অবতীর্ণ হয়।

يكفرون بايات الله 

/>এর ব্যাখ্যা-ايات الله বলতে আল্লাহ তাআলার কিতাব উদ্দেশ্য। অথবা, নবী গনের মুজেজা বা অলৌকিক ঘটনা উদ্দেশ্য। বনি ইসরাইল বিভিন্নভাবে এগুলোর সাথে কুফরী করেছে-(১) মহান রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত শিক্ষা বলি হতে যে বিষয়টি নিজেদের চিন্তা ভাবনা, ধ্যান-ধারণা আশা-আকাঙ্ক্ষার বিরোধী পেয়েছে,তাকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।(২) কোন বিষয়ে আল্লাহ তাআলার বাণী জানার পরও পূর্ণ দাম্ভিকতা, নির্লজ্জতা, ও বিদ্রোহাত্মক মনোভাব সহকারে এর বিরুদ্ধাচরণ করেছে এবং আল্লাহ তাআলার নির্দেশের কোন পরোয়া করেনি। (৩) মহান আল্লাহতালার বানী এর অর্থ ও উদ্দেশ্য ভালোভাবে জানা ও বুঝার পর ও নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী এতে পরিবর্তন করেছে।

/>*বনি ইসরাইল রা কোন এক সকালে তিনশত নবী কে হত্যা করেছিল এবং বিকেলে স্বাচ্ছন্দে তরিতরকারির হাট-বাজার করেছিল। উক্ত আয়াতাংশ দ্বারা আল্লাহ তাআলা তাদের এহেন জঘন্যতম কাজের বর্ণনা দিয়ে তাদের জন্য চিরস্থায়ী শাস্তির ঘোষণা দেন।

অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, ইহুদীরা হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহহিয়া আলাইহিস সালামকে অনর্থক অন্যায় ভাবে হত্যা করেছিল। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম কে হত্যা করতে চেয়েছিল। তাছাড়া বনি ইসরাইল একদিনে চল্লিশ জন নবী কে হত্যা করেছিল। পরবর্তীকালে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ইহুদিরা নিজের স্বরূপ প্রকাশ করে দিয়েছিল। তাই আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সীমালঙ্ঘনকারী ও অভিশপ্ত জাতি বলে উল্লেখ করেছেন।

/>৬২,ক, আয়াতের শানে নুযূল-হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন, আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে হাজির হওয়ার পূর্বে যেসব দ্বীনদারদের সাথে মিলিত হয়েছিলাম, তাদের নামাজ রোজা সম্পর্কে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বর্ণনার পর বলেছিলাম যে, এ সমস্ত নামাজি ও রোযাদারগণ আপনার আগমনের বিশ্বাসী। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারা জাহান্নামী। এতে হযরত সালমান রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু দুঃখিত হন। তখন উপরোক্ত আয়াত আবর্তিত হয় (ইবনে কাছীর)

/>খ, হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু, এর সঙ্গী সাথীদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। একদা তিনি জনাব নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে আলোচনা করেছিলেন। এর মধ্যে তখন তার সঙ্গী সাথীদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। তখন তিনি তাদের সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে বলেন যে, তারা নামাজ আদায় করত, রোজা রাখত, আপনার প্রতি তাদের বিশ্বাস ও ছিল, এবং তারা সাক্ষী প্রদান করত যে, আপনি নবী হয়ে প্রেরিত হবেন। অতঃপর সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু তাদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে শেষ করার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে সালমান! তারা হবে জাহান্নামী। একথা হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এর নিকট অত্যন্ত পীড়াদায়ক অনুভব হল এবং তার পদতল হতে মাটি সরে যাচ্ছিল বলে অনুভব করেছিলেন। তখন সে হতাশাগ্রস্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আলোচ্য আয়াতে অবর্তীর্ণ করেন। হযরত সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বলেন যে, এ আয়াত শুনে আমি বর্ণনাতীত আনন্দিত হলাম। (ইবনে কাছীর)

/>৬৫, আয়াতের শানে নুযূল

-হযরত মূসা আলাইহিস সালাম ইবাদতের জন্য জুম'আর দিন নির্দিষ্ট করেন, কিন্তু বনি ইসরাইল তার বিরোধিতা করে এবং শনিবার দিন ইবাদতের জন্য পছন্দ করে। তারা যুক্তি দেখিয়ে বলল, কাজ করব না। কাজে তাদেরকে বলা হলো ঠিক আছে তোমরা ঐদিন ইবাদত করবে, কোন কাজ করবে না, এমনকি মাছ শিকার করবে না, ওইসব লোক যেহেতু ঈলা নামক চরের নদীর তীরে বাস করতো। পরীক্ষার উদ্দেশ্যে শনিবার দিন ওই নদীর কিনারায় সকল প্রকার মাছ ভিড় করত। শেষ পর্যন্ত তারা কৌশল অবলম্বন করে, নদীর তীরে গর্ত খোদাই করে নদীর নালার সাথে নালা করে দেয়, এতে শনিবার মাছ একত্রিত হতো, আর রবিবার দিন তারা সে মাছ শিকার করতো। আর বলতো আমরা শনিবার দিন মাছ শিকার করিনি ।সে ঘটনা আলোচনা প্রসঙ্গে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়।

ব্যাখ্যা--ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এই যে, ইহুদিদের ইবাদত করার জন্য আল্লাহ তাআলা শনিবার দিনকে নিদৃষ্ট করেছিলেন। মূলত এই দিনে সমুদ্রে মৎস্য শিকার করা তাদের জন্য সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু তারা তাদের চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করার জন্য নানাবিধ কৌশল অবলম্বন শুরু করে তারা শনিবার দিন জালে মাছ আপকেপর দিন সেগুলো উঠিয়ে নিয়ে ভক্ষণ করত এ ব্যাপারে ধার্মিকও আল্লাহভীরুদের বাধাদানের ভ্রুক্ষেপ করত না। শেষ পর্যন্ত ধার্মিক লোকেরা তাদের এহেন আল্লাহদ্রোহী আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে তাদের সমাজ চূত করে বস্তির মধ্যখানে দেয়াল নির্মাণ করে তাদের থেকে সম্পূর্ণ পৃথক বসবাস করত এবং দেয়ালে একটি মাত্র ফটক রাখে। একদিন ভোর বেলায় আল্লাহ ভীরু লোকেরা লক্ষ করল, বেলা অনেক হয়ে গেছে, অথচ এরা এখনও দরজা খুলেনি। তখন তারা দরজা খুলে দেখতে পেল যে, এরা সবাই বানরে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এদের প্রত্যেককে যথারীতি চেনা যাচ্ছে। এভাবে তিন দিন কেটে যাওয়ার পর এরা সবাই মৃত্যুবরণ করে। ঐশী আদেশ না মানার কারণে এভাবে এদের ধ্বংস হয়েছে।

চলবে,,
পাঠকদের জন্য লিখা কি বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে?

Subscribe by Email

Follow Updates Articles from This Blog via Email

No Comments

About

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

Copyright . Blogger দ্বারা পরিচালিত.

সূরা বাকারা আয়াত ৯১-৯৫

Tafsir-e-quran সূরা বাকারা আয়াত (৯১-৯৫) পর্ব -১৮ ✍️ পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। 🌷সুরা আল বাকারা(আয়াত ৯১-৯৫) ৯১. আর...