👉 পর্ব -১০
✍️
পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
🌺
সুরা আল বাকারা (আয়াত ৫১-৫৫) অর্থ ও তাফসির
৫১, আর যখন আমি মুসার সাথে ওয়াদা করেছি ৪০ রাত্রির অতঃপর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছো মুসার অনুপুস্থিতিতে। বস্তুতঃ তোমরা ছিলে যালেম।
৫২, তারপর আমি তাতেও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে নাও।
৫৩, আর (স্মরণ করো )যখন আমি মূসাকে কিতাব এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য বিধানকারী নির্দেশ দান করেছি ,যাতে তোমরা সরল পথ প্রাপ্ত হতে পারো।
৫৪, আর যখন মূসা তার সম্প্রদায় বলল, হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা তোমাদেরই ক্ষতি সাধন করেছো এই গোবৎস নির্মাণ করে। কাজেই এখন তওবা করো স্বীয় স্রষ্টার প্রতি এবং নিজ নিজ প্রাণ বিসর্জন দাও। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর তোমাদের স্রষ্টার নিকট। তারপর তোমাদের প্রতি লক্ষ্য করা হলো। নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষমাকারী, অত্যন্ত মেহেরবান।
৫৫, আর যখন তোমরা বললে, হে মূসা, কস্মিনকালেও আমরা তোমাকে বিশ্বাস করব না, যতক্ষণ না আমরা আল্লাহকে দেখতে পাবো। বস্তুতঃ তোমাদিগকে পাকড়াও করল বিদ্যুৎ।অথচ তোমরা তা প্রত্যক্ষ করেছিলে।
🌍আল্লাহ তাআলা সত্য বলেছেন
🌺..……আয়াত সমূহের ব্যাখ্যা......🌺
▪️ এ ঘটনা ঐসময়ের, যখন ফেরাউন সমুদ্র নির্বাচিত হওয়ার পর বনি ইসরাইলরা কারো কারো মতে মিসরে ফিরে এসেছিল আবার কারো কারো মতে অন্য কোথাও বসবাস করছিল। তখন মুসা আলাইহিস সালাম এর খেদমতে বনি ইসরাইলরা আরজ করল যে, আমরা এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ অনিশ্চিত। যদি আমাদের জন্য কোন শরীয়ত নির্ধারিত হয়, তবে আমাদের জীবন বিধান হিসেবে আমরা তা গ্রহণ ও বরণ করে নেব। মূসা আলাইহিস সালাম এর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ পাক অঙ্গীকার প্রদান করেন যে, তুমি তূর পর্বতের অবস্থান করে এক মাস পর্যন্ত আমার আরাধনা ও অতন্দ্র সাধনায় মগ্ন থাকার পর তোমাকে এর কিতাব দান করবো। মূসা আলাইহিস সালাম তাই করলেন। ফলে তাওরাত লাভ করলেন। কিন্তু অতিরিক্ত দশদিন উপাসনা আরাধনার মগ্ন থাকার নির্দেশ দেওয়ার কারণ ছিল এই যে, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এক মাস রোজা রাখার পর ইফতার করে ফেলেছিলেন। আল্লাহ তাআলার কাছে রোজাদারের মুখের গন্ধ অত্যন্ত পছন্দনীয় বলে মূসা আলাইহিস সালামকে আরো দশ দিন রোযা রাখতে নির্দেশ দিলেন, যাতে পুনরায় গন্ধের উৎপত্তি হয়। এভাবে ৪০ দিন পূর্ণ হলো। মূসা আলাইহিস সালাম তো ওইদিকে তূর পর্বতে রইলেন, এদিকে সামেরি নামক এক ব্যক্তি সোনা রুপা দিয়ে গোবৎসের একটি প্রতিমূর্তি তৈরি করল এবং তার কাছে পূর্ব থেকে সংরক্ষিত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এর ঘোড়ার খুরের তলার কিছু মাটি প্রতিমূর্তির ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়ায় সেটি জীবন্ত হয়ে উঠলো এবং অশিক্ষিত বনি ইসরাইলরা তারই পূজা করতে আরম্ভ করে দিল।!
যখন হযরত মূসা আলাইহিস সালাম তুর পর্বত থেকে তাওরাত নিয়ে এসে বনি ইসরাইলের সামনে পেশ করে বললেন যে, এটা আল্লাহ প্রদত্ত কিতাব তখন কিছু সংখ্যক লোক বলল যদি আল্লাহ স্বয়ং বলে দেন যে এ কিতাব তাঁর প্রদত্ত, তবে অবশ্যই আমাদের বিশ্বাস এসে যাবে। মূসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর অনুমতিক্রমে এতদুদ্দেশে তাদেরকে তূর পর্বতে যেতে বললেন। বনি ইসরাইলরা ৭০ জন লোককে মনোনীত করে হযরত মুসা আলাই সালাম এর সঙ্গে তূর পর্বতে পাঠাল। সেখানে পৌঁছে তারা আল্লাহর বাণী স্বয়ং শুনতে পেল। তখন তারা নতুন ভান করে বলল, শুধু কথা শুনে তো আমাদের তৃপ্তি হচ্ছে না আল্লাহই জানেন এ কথা কে বলেছে। কিন্তু যেহেতু এ মরজগতে আল্লাহকে দেখার ক্ষমতা কারো নেই, কাজেই এ ধৃষ্টতার জন্য তাঁদের উপর বজ্রপাত হলো এবং সবাই ধ্বংস হয়ে গেল। তাদের এই ধ্বংসপ্রাপ্তির বর্ণনা পরবর্তী আয়াতে রয়েছে।
(নোট: মুসা ইবনে ইমরান হলেন ইসরাইলি সিলসিলার সর্বাধিক খ্যাত ও মর্যাদার অধিকারী পয়গম্বর। তাওরাত মতে ১২০ বছর বয়স পেয়েছিলেন তিনি। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকদের অনুমান মতে হযরত মুসা আলাইহিস সালাম এর সময়কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দী। জন্ম ও মৃত্যু সম্ভবত যথাক্রমে খ্রিস্টপূর্ব ১৪০০ও ১৫২০সালে।(তাফসীরে মাজেদী)
চলবে....
Subscribe by Email
Follow Updates Articles from This Blog via Email
No Comments